শার্শায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ
প্রকাশিত : ১৮:৩৬, ৫ জানুয়ারি ২০১৯
দেশের অন্যতম একটি তৈল জাতীয় খাদ্যের নাম সরিষা। চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শা উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে উঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন এ উপজেলার কৃষকরা।
মাঠে মাঠে বিস্তৃর্ন এলাকায় দৃষ্টিজুড়ে শুধুই হলুদের সমারোহ। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সরিষা ক্ষেত। সরিষার মাঠে ইতোমধ্যে দেখা মিলছে মৌমাছির মধু আহরণের দৃশ্য। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রত্যেক সরিষা চাষী অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১ হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবছর আরও ৬০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হচ্ছে। আর কৃষকরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৯/১০ ও স্থানীয়ভাবে বারি-৭ হাইল্যান্ড ও সম্পদ জাতের সরিষা চাষ করেছে। ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের সরিষা চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, এ বছর দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
একই গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছি ফলন ভালো ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরও অনেকেই ঝুঁকে পড়বে।
এই উপজেলার ঘিবা গ্রামের কৃষক আমিরুল রহমান জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষার জমিতে ধানের আবাদ ভালো হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়।
এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
তিনি আরও জানান, বারি-১৪ সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই এ জাতের সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করি এবং বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা প্রদান করি। বর্তমান বছরে এ পর্যন্ত এ উপজেলায় ৯০০ জন কৃষককে উপকরণ সহায়তা প্রদান করেছি।
কেআই/ এসএইচ/
আরও পড়ুন